প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ২২:০৩
হাজীগঞ্জের সেই অপ-চিকিৎসকের ৩ লাখ টাকায় শিশুর পরিবারের সাথে রফা !
বাক প্রতিবন্ধী ছেলের ভাঙ্গা হাতের অপ- চিকিৎসা দিতে গিয়ে পচন ধরার কারনে শিশু আরাফাত হোসেন (১৩) পরিবারের সাথে ৩ লাখ টাকায় রফা করে পার পাচ্ছেন কথিত সেই অপ- চিকিৎসক আলাউদ্দিন !
গত রোববার শিশুর পরিবারকে এই টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। সমঝোতা বৈঠকে শিশুর বাবা হাছান মিয়া, ফারুক হোসেন, ডিপ্লোমা সেই চিকিৎসক আলাউদ্দিন, অভিজিৎ পোদ্দার, কামরুজ্জামান কায়েসসহ ফার্মেসীর পরিচালক ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শিশুটির বাবা হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার কয়েকদিন পর এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ হয়। মূলত প্রকাশিত সংবাদের পর থেকেই শিশুর পরিবারের সাথে সমঝোতার জন্য আগ্রহী হন সেই চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন। আরাফাত হোসেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গুপ্টি ইউনিয়নের মানুরী গ্রামের নোয়া বাড়ির হাছান মিয়ার ছেলে। আলাউদ্দিন চেম্বার করেন হাজীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ সড়কের একটি ফার্মেসীতে।
সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করে শিশুটির বাবা হাছান মিয়া সংবাদকর্মীদের জানান, ডাক্তারের পরিবারের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে আমার ছেলের (আরাফাত) চিকিৎসা করাবো। বর্তমানে সে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আপনারা আমার সন্তানটাকে দোয়া করবেন।
এ বিষয়ে সেই চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন বলেন, শিশু আরাফাতাকে আর্থিক সহযোগিতা করে এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর (২০২১) প্রতিবন্ধী শিশু আরাফাত হোসেন খেলতে গিয়ে তার ডান হাতের কনুই ভেঙ্গে যায়। এরপর হাজীগঞ্জ বাজারে ডাক্তার পদবী ব্যবহারকারী মো. আলাউদ্দিন ও চাঁদপুুর সদর উপজেলার মৈশাইদি গ্রামে এক কবিরাজের অপ-চিকিৎসায় শিশুটির হাতে পচন ধরে। ইতিমধ্যে তার হাতের দুইটি আঙ্গুল কেটে ফেলেছে চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যে হাতের অপারেশনও সফল হয়েছে।
এই ঘটনায় শিশুটির বাবা মো. হাছান মিয়া কথিত চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস. এম সোয়েব আহমেদ চিশতীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তবে তিনি ওই অভিযোগে কবিরাজের কথা উল্লেখ করেন নি।
শিশুটির ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্রিপশন) দেখা যায়, মো. আলাউদ্দিন ডাক্তার পরিচয়ে হাজীগঞ্জ বাজারের ডিগ্রি কলেজ রোডস্থ একটি ফার্মেসীতে প্রতিদিনি সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত (সোমবার বন্ধ) রোগী দেখেন। তিনি তার যোগ্যতা হিসেবে ডি.এম.এফ (ঢাকা), বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ এক্স.এফ.টি (জেনারেল হাসপাতাল, কুমিল্লা), জেনারেল ফিজিসিয়ান, বিএমএন্ডডিসি রেজিষ্ট্রেশন নং- ডি-২০৭৩৯ উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিশু আরাফাত একজন বিশেষায়িত প্রতিবন্ধী। গত ৩ ডিসেম্বর অসাবধনাতবশত তার হাত ভেঙ্গে যায়। আর্থিক সমস্যার কারনে হাসপাতালে না নিয়ে মো. আলাউদ্দিনেরর কাছে নিয়ে আসে। আলাউদ্দিন শিশুটির হাত প্লাষ্টার করে ব্যবস্থা পত্র দিয়ে বিদায় করেন। এর দুইদিন পর অসহ্য ব্যথার কারনে ৫ ডিসেম্বর ব্যান্ডেজ খুলে দেন তার চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান কায়েসসহ শিশুর পরিবারের লোকজন। এরপর তাকে মৈশাইদ এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ৯ ডিসেম্বর বাড়িতে আনার পর ওই দিনই রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান কামরুজ্জামান কায়েস।